শিরোনাম
শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে বিতর্ক, বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ ট্রেনে ঈদ যাত্রা : ২৫ মার্চের টিকিট মিলছে আজ আজ ২ কোটি ২৬ লাখ শিশু খাবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল দেবীগঞ্জে মসজিদ ও কবরস্থানের জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগে এলাকাবাসীর মানববন্ধন  আগামী এক দশকের মধ্যে পঞ্চগড়ের একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন : সারজিস যৌথ অভিযানে সাত দিনে ৩৮৩ অপরাধী গ্রেপ্তার রংপুরে মামলা থেকে নাম সরাতে ব্যবসায়ী মারফত ঘুষ দাবি পুলিশ কর্মকর্তার, বাদীকে থানাতেই মারধর জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে নিজ দেশে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টি নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের বাংলাদেশের সংস্কারে পাশে থাকার আশ্বাস গুতেরেসের
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন

সেনাপ্রধান মনে করেন নির্বাচন ১৮ মাসের মধ্যে হওয়া উচিত

রিপোটারের নাম / ৬৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Oplus_131072

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের সংস্কার কাজে সাহায্য করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। যাতে করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্সে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ‘যা-ই ঘটুক না কেন’, অন্তর্বর্তী সরকারকে এ সমর্থনের আশ্বাস দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

রয়টার্সের ওই সাক্ষাৎকারে বলা হয়, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার সেনা সদস্যরা আগস্টের শুরুতে হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মধ্যে একপাশে দাঁড়িয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার ভাগ্য সিল করে দিয়েছেন। সোমবার রাজধানী ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে রয়টার্সকে এক বিরল সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন আছে এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি দেওয়া তার লক্ষ্য। সেনাপ্রধান বলেন, আমি তার (ড. ইউনূস) পাশে দাঁড়াব, যা-ই ঘটুক না কেন, যাতে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।

রয়টার্সের ওই সাক্ষাৎকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করা ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের জন্য এক বছর বা বছর দেড়েক সময় লাগতে পারে। তবে তিনি এ সময় জনগণের ধৈর্য ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি বলব যে, এই সময়ের মধ্যে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করা উচিত। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও এর প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। সেনাপ্রধান জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে আমার প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ হয়। তার সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক। সেনাবাহিনীর সহায়তায় সরকার দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার কাজ করছে। আমি নিশ্চিত যে, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে যে ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়। যা পরবর্তীতে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে পরিণত হয়, তাতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এটি সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী এক আন্দোলন। আন্দোলনের কেন্দ্রে থাকা ঢাকার সড়কগুলোতে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের নাটকীয় পতনের পর প্রশাসনের কিছু অংশ এখনো সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনী এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে এগিয়ে এসেছে।

শাস্তি ও সংস্কার: রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনার বাবা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার অভ্যুত্থান ঘটায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। এই সরকার দুই বছর দেশ চালায়। পরে হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না। ওয়াকার উজ-জামান রয়টার্সকে বলেন, আমি এমন কিছু করব না, যা আমার সংস্থার জন্য ক্ষতিকর হবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই। হাসিনার বিদায়ের পর সরকারের ব্যাপক সংস্কারের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীতেও অন্যায়কারী সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, অনেক সেনাসদস্যকে ইতোমধ্যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারে শাস্তির ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, ‘যদি কোনো কর্মরত সেনাসদস্য দোষীসাব্যস্ত হন, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারেন।

২০০৯ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় ৬০০ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের সাবেক এক বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখতে চান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম অবদান রাখা দেশ বাংলাদেশ। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে রাখা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, এটা কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেনাপ্রধান যে ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ