বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগের বেশির ভাগ জেলাতেই ভূগর্ভে পানির প্রবাহের যে পথ ও বিন্যাস তা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ফলে পানির প্রাপ্যতাও সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হচ্ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত ‘পানি-সংকটপূর্ণ ও খরাপ্রবণ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আঞ্চলিক ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহপথের পরিবর্তনের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণার এমনি তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটি করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান মনির, সুবরণ চন্দ্র সরকার, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের গবেষক (সিইজিআইএস) রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মো. নজরুল ইসলাম।
গবেষণা থেকে দেখা গেছে, গত ২০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহের ফলে কোনো একটি স্থানে সাধারণত যে পরিমাণ পানি স্থিতিশীল থাকে, তার পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে এবং প্রবাহগতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো—স্যাচুরেটেড স্তরের (সাধারণত মাটির নিচে সর্বনিম্ন যে গভীরতায় স্বচ্ছ ও সুপেয় পানি নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়) পরিবর্তন ও হাইড্রোলিক হেডের (নদী বা সাগরের পানিপৃষ্ঠের তুলনায় কোনো একটি অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতার ফারাক) ওঠানামা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গড় প্রবাহ গতির হার ছিল প্রতি বছর পাঁচ হাজার ৯০০ থেকে সাত হাজার ৩০০ মিটার পর্যন্ত এবং প্রতিটি মৌসুমেই এটি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ভলিউম ব্যালেন্স রেসিডিউয়াল (কোনো একটি ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে পানি আসা-যাওয়ার পর কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে) ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সামান্য বৃদ্ধি পেলেও ২০১০-২০২০ সালের মধ্যে তা হ্রাস পেয়েছে।
এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায়। গবেষণা এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহপথের ওঠানামার হার ব্যাপকভাবে বদলে যাচ্ছে এবং এর প্রবণতাও পরিবর্তিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর যেখানে থাকার কথা প্রতি বছরই সেটা আরও নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
গবেষণার ফলাফল নির্দেশ করে যে, উত্তরবঙ্গের ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ পথের পরিবর্তন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং এর বিন্যাসও বদলে যাচ্ছে। বিশেষ করে, যেসব অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যাপক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, সেসব এলাকায় এই অবক্ষয় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গবেষণার এলাকার ৩১ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল বর্তমানে চরম ও তীব্র খরার সম্মুখীন, যার প্রধান কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের তারতম্য।