রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন

শবেবরাতে করণীয় ও বর্জনীয়

ডেস্ক নিউজ / ৩২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

শবেবরাত শব্দটি ফারসি থেকে এসেছে। শব অর্থ হলো রাত, আর বরাত অর্থ মুক্তি। অর্থাৎ শবেবরাতের অর্থ হলো মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘লাইলাতু নিসফ শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এই উভয়ের মাঝে যা আছে সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে।’ (সুরা-৪৪ [৬৪] দুখান)

 

হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?

আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।

 

হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। নবীজি (সা.) তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।

শবে বরাতে করণীয়

ক) এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা। এ ছাড়া নফল নামাজ [১] তাহিয়্যাতুল অজু, [২] দুখুলিল মাসজিদ, [৩] আউওয়াবিন, [৪] তাহাজ্জুদ, [৫] ছলাতুত তাসবিহ [৬] তাওবার নামাজ, [৭] ছলাতুল হাজাত, [৮] ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।

(খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।

(গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা;

(ঘ) বেশি বেশি কোরআন শরিফ পড়া। বিশেষ করে [১] সুরা দুখান ও [২] অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা;

ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া;

(চ) তাওবা-ইস্তেগফার অধিক পরিমাণে করা;

(ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা;

(জ) কবর জিয়ারত করা;

(ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।

শবে বরাতে বর্জনীয়

(১) আতশবাজি, পটকা ফোটানো,

(২) ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে বেহুদা ঘোরাফেরা করা,

(৩) অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ-উল্লাস করা,

(৪) অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা,

(৫) অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো,

(৭) সময় নষ্ট করে ইবাদত থেকে গাফিল থাকা।

শবেবরাত শব্দটি ফারসি থেকে এসেছে। শব অর্থ হলো রাত, আর বরাত অর্থ মুক্তি। অর্থাৎ শবেবরাতের অর্থ হলো মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘লাইলাতু নিসফ শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ