পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কড়ালগ্রাসী খরস্রোত ব্রহ্মপুত্র নদ বর্তমানে ধু ধু বালুচরে পরিনত হয়েছে।এ নদে বর্ষা কালে পানি প্রবাহের যে কল কল ধ্বনি ছিল,তা এখন আর নেই।দেখে মনে হয় যেন ছোটÍএকটি মরা খাল।চারিদিকে ধুধু বালুচর আর চর।অনেক স্থান এখন আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। মুল নদেও দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। নদের গতি পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় নাব্যতা সংকটে নৌপথে চলা ফেরি ও নৌকা প্রায়ই আটকে পড়ছে।সময়মতো এবং সঠিকভাবে নদ ড্রেজিং না করায় নাব্যতা সংকটসহ মরা খালে পরিণত হচ্ছে কড়াল গ্রাসী খরস্রোত ব্রহ্মপুত্র নদ বলে সচেতন মহলের অভিযোগ।
নদীতে নাব্যতা না থাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙি নৌকা চলাচল করতেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।যে পরিবারগুলো এক সময় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো,মুল পেশা হারিয়ে তারা আজ দিনমজুরসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত।এতে চরগুলোয় বসবাসকারী মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।নদের এই অবস্থার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। নদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় বেশী দুরত্বের চর সমুহে বসবাসকারী মানুষ সহজে হাট-বাজার করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে তারা।
ব্রহ্মপুত্র নদের পার ঘুরে দেখা যায়,তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে।আর এর মাধ্যমে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। যত্রতত্র শ্যালো মেশিন চালিত ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। ফলে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ডানতীর রক্ষা প্রকল্প এখন হুমকির মুখে। অপরদিকে সঠিকভাবে ড্রেজিংয়ের অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্যতা হারিয়ে এখন শুধুই বালুচর।শুকিয়ে যাওয়া চরের কোথাও কোথাও ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন রকম শাক-সব্জি ও ফসল।
ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন নয়ারহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মঞ্জু মিয়া,মাহফুজার রহমান,চিলমারী ইউনিয়নের মেহেদী হাসান, বাদল মিয়া এবং অষ্টমীরচর এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র যে কড়ালগ্রাসী ও খরস্রোত একটি নদ তা শুধু বর্ষা মৌসুমেই বোঝা যায়।আর বর্ষা শেষ হলে মাইলের পর মাইল শুধু চর আর চর।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী জোড়গাছ হাট এলাকার খিতিশ চন্দ্র,রজব আলী,জিয়া মিয়া,ফরহাদ আলী, জাকির হোসেন,বাচ্চু মিয়া ও মমিনুল ইসলামসহ অনেকে জানান,উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন (চিলমারী,নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়ন) ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভাজিত। ইউনিয়ন তিনটির অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রিসহ বাজার-ঘাট করতে সপ্তাহে দুদিন জোড়গাছ হাটে আসতে হয়। নদে নাব্যতা না থাকায় অনেকদুর পথ হেটে অতি কষ্টে তাদের বাজার করতে জোড়গাছ হাটে আসতে হয়।অপরদিকে ওই চরাঞ্চল সমুহে উৎপাদিত পণ্যের পরিবহণ ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুন।তেল ব্যবসায়ী ফরহাদ আলী বলেন,চরাঞ্চলীয় এলাকায় নেয়ার জন্য নৌকা পর্যন্ত আনতে আগে এক ড্রাম তেলের ভাড়া ছিল ২০টাকা। নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এক ড্রাম জ্বালানী তেল নৌকা পর্যন্ত আনতে পরিবহণ ব্যয় হচ্ছে ১০০টাকা।
এছাড়াও নদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় চিলমারী থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর যেতে ফেরি এবং নৌকায় ঝুকি নিয়ে দ্বিগুনেরও বেশী সময় ধরে পার হতে হচ্ছে।এতে যাত্রীদের সময় এবং আর্থিক ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকা সমুহে ২হাজারের বেশী মৎস জীবি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো।নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তারা মাছ ধরতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
মাঝিপড়া এলাকার ফুলেল মাঝি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরা নদ।এখানে কোনো মাছ নেই।সারা দিন জাল ফেলে ২০-৩০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না।তাই জেলে পরিবারগুলো বড় কষ্টে আছে।মাছ না থাকায় পেশা ছেড়ে অনেকে দেশের বিভিন্ন শহরে রিকশা চালান,কেউ দোকানে,কেউবা মাটি কাটার কাজ করছেন।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুকিয়ে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় ব্যবসায়-বাণিজ্য কিংবা চলার পথে নানাবিধ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদকে পরিকল্পিত ভাবে খনন করা হলে নদটি এলাকাবাসীর আশির্বাদ হয়ে থাকতো। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হলে এ নদী আবার প্রাণের স্পন্দন ফিরে পাবে। উপকৃত হবে চরাঞ্চলীয় মানুষসহ গোটা উপজেলার লোকজন।