বাংলাদেশ পুলিশের (আইজিপি) পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে যারা অপরাধী (পুলিশ ) তাদের বিচারের আওতায় এনে ও সরিয়ে দিয়ে পুলিশকে আবার স্বগৌরবে ফিরে আনা, কর্মক্ষম করে তোলা ও পুলিশকে আবার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আমরা চেষ্টা করছি। দেশে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে, পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটা আবেগের বিষয়। হয়তোবা তাদের অতীত স্মৃতি মনে করে দেয় যখন পুলিশ অন্যায়ভাবে মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে। অন্যায় আচরণ করেছে এবং গণবিরোধী আচরণ করেছে। নাগরিক সমাজের প্রতি আমার অনুরোধ পুলিশকে আপনারা কাছে টেনে নিন এবং তাদেরকে কাজ করতে সহায়তা করুন।
বৃহস্পতিবার( ৬ মার্চ) দুপুরে রংপুরে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ’ বিষয়ক একটি কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এর আগে সকালে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় মিলনায়তনে শুরু হওয়া এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন পরিবেশ বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান,আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। কর্মশালায় অংশ নেন বিভাগের আট জেলার বিচারক,পাবলিক প্রসিকিউটর,ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, ৫ ই আগস্টের আগে যে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল সে সরকার তার ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে মানুষের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। তার স্মৃতি আমাদেরকে এখনো বহন করতে হচ্ছে। প্রায় এক হাজার শহীদ এবং কয়েক সহস্র আহত ছাত্র জনতা আমাদের স্মৃতিতে মনে করিয়ে দেয় আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় পাঁচ আগস্টের আগে ১৫ বছর আমরা কিভাবে অসহনীয় পরিস্থিতিতে কাল কাটিয়েছি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে যে সকল অন্যায় সংগঠিত হয়েছে সেগুলো সঠিক তদন্ত বিচারের মাধ্যমে যদি নিষ্পত্তি না করা হয় এবং মানুষ যদি ন্যায়বিচার না পায় তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। এই প্রয়াস যেন সুসম্পন্ন হয় এজন্য এখানে যারা বিচারক, সরকারি কৌশলী, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আপনাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসের দরকার রয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে যেসকল শহীদদের পোস্টমর্টেম করা হয়নি সে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,অনেক মামলা হয়েছে যেখানে ৫ই আগষ্টের অব্যবহিত পরে যথাযথভাবে মামলা রুজু হয়নি। একই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে আবার শহীদের ঘটনায় আমরা পোস্টমর্টেম করতে পারিনি। একটি ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে একজন বলছিল যে, জুলাই বিপ্লবের সময় শহীদদের উন্মুক্তভাবে কবর দেওয়া কঠিন ছিল।অনেক মা তার সন্তানকে ঝোপ-ঝাড়ে,জঙ্গলে কবর দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে শহীদ হওয়ার বিষয়টিও বলতে পারেননি। কারণ বলতে গেলে তার উপর অত্যাচার নেমে আসবে যে কেন তোমার ছেলে আন্দোলনে গিয়েছিল। কাঁদতেও পারেনি,কাঁদার স্বাধীনতাও ছিল না। যেখানে কবর দিতেই পারছেনা সেখানে হসপিটালে নিয়ে পোস্টমর্টেম করা অকল্পনীয়। এখন এসব মৃত্যুর সুবিচার ও ন্যায় বিচার দিতে হলে আমরা যদি আইনের প্রতীঅক্ষরের দিকে চিন্তা করি যে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নেই তাহলে এই জাতির প্রতি,আন্দোলনের প্রতি,শহীদদের প্রতি আমরা হয়তোবা ন্যায়বিচার করতে পারব না। এ বিষয়ে এখানে উপস্থিত অ্যাটর্নি জেনারেল বিস্তারিত বলবেন।