লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর নিজপাড়া এলাকায় চেতনানাশক দিয়ে দুইটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরদিনই অস্ত্রের আঘাতে এক ব্যবসায়ীর প্রায় দেড় লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। একই এলাকায় মাত্র দুই দিনের মধ্যে এমন তিনটি চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রুহুল আমিন (৪২) নামের এক অটোরিকশাচালককে চেতনানাশক দিয়ে অচেতন করে রাস্তায় ফেলে তার অটোরিকশাটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। একইদিন রাত ৮টায় শহিদুল ইসলাম (৪৮) নামের আরেক অটোরিকশাচালককে অচেতন করে তারও অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়। পরদিন নিজপাড়া স্কুল সংলগ্ন এলাকায় নজির উদ্দিন (৩৮) নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা ছিনতাই করে অজ্ঞাতরা।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা (২৪) বলেন, আমার বাবাকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অচেতন করে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আমি এর বিচার চাই। আমরা গরিব মানুষ। পুলিশ যেন তাড়াতাড়ি ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আমাদের অটো উদ্ধার করে ফেরত দেয়।
ভুক্তভোগী নজির উদ্দিন বলেন, আমি গরুর ব্যবসা করি। গরু ক্রয়ের টাকা পরিশোধ করার জন্য বটতলা এলাকা থেকে বুড়িরবাজার যেতে নিজপাড়া স্কুলের পিছনের রাস্তার মোড়ে কয়েকজন আমাকে আটক করে। চেইন দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে ক্ষুর জাতীয় কিছু দিয়ে আমার হাত ও পিঠে আঘাত করে ছিনতাইকারীরা। আমার কাছে থাকা ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তারপর আমি আমার পরিচিত লোকদের ফোন করলে তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
নিজপাড়া এলাকার বেলাল হোসেন (৫০) বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে নিজপাড়া পুলিশ বক্স সংলগ্ন রাস্তায় এক অটোচালককে চেতনা নাশক দিয়ে অচেতন করে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায় অজ্ঞাতরা। একইদিন নিজপাড়া মসজিদের সামনে আরেকজন অটোচালককে একই কায়দায় অচেতন করে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাই কারীরা। পরদিন নিজপাড়া স্কুল সংলগ্ন মোড়ে আরেকজন গরু ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনেছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এই এলাকায় দুইটি পুলিশ বক্স ও পুলিশি টহল জোরদারের দাবি জানাই।
পার্শ্ববর্তী এলাকার মো. মমিন বলেন, সন্ধ্যার পর এই রাস্তায় একাই বের হওয়া যায় না, ছিনতাই হয়। আমাকেও একদিন ছিনতাইকারীরা ধরছিল আমি দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেছি। আমাদের দাবি এই এলাকায় পুলিশ বক্স স্থাপন করা হোক।
রিকশাচালক আবু তৈয়ব বলেন, এই রাস্তায় বর্তমান অতিরিক্ত ছিনতাই হচ্ছে। সাধারণ লোকজন গেলেও ছিনতাইকারীরা টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। আমরা তো অনেক রাত পর্যন্ত রিকশা চালাই, ভয়ে এ রাস্তায় আসি না। আদের দাবি এই এলাকায় পুলিশ বক্স দিয়ে পুলিশি টহল জোরদার করা হোক। কয়েক বছর আগে নিরাপত্তার স্বার্থে এই এলাকায় দুটি অস্থায়ী পুলিশ বক্স নির্মাণ করা হয়। তবে ব্যবহৃত না হওয়ায় দিনে দিনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পুলিশ বক্স দুইটি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, আমরা ওই এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করেছি। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা চক্রটির এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি এবং একটি অটোরিকশা উদ্ধার করেছি।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছি। ওই এলাকা পরিদর্শন করে চেকপোস্ট চালু করা হবে। লালমনিরহাটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের যা করা দরকার আমরা তাই করব।