গাজীপুর থেকে বন্ধুদের নিয়ে সাহ্রি খেতে ঢাকায় এসেছিলেন আবদুর রাজ্জাক ফাহিম নামের এক যুবক। মাঝে পল্লবীতে গিয়ে শুনতে পান, সেখানে একজন খুন হয়েছেন। বিষয়টি জানাতে তিনি পল্লবী থানায় হাজির হন। তবে ওসিসহ অন্যরা তাঁকে জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সেবাপ্রত্যাশী স্থানীয় এক বাসিন্দাও বলেন, এমন কিছু ঘটেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ওপর চড়াও হন ফাহিম। তখন ওই ব্যক্তিকে বাঁচাতে তাঁর ছেলেসহ পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে যান। এ সময় যুবকের মারধরে পল্লবী থানার ওসিসহ চারজন আহত হন।
সোমবার গভীর রাতে এমন ঘটনার পর ফাহিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েছেন। আহতদের মধ্যে আছেন ওসি নজরুল ইসলাম, এসআই শরিফুল ইসলাম ও এএসআই মো. নাসির। তাদের মধ্যে নাসিরের আঙুল ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাইয়ুম সমকালকে বলেন, ফাহিম কী কারণে এমন কাণ্ড ঘটালেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খুনের কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকেন ফাহিম। তাঁর বাবা মফিজুর রহমান একটি বায়িং হাউসে সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার। সোমবার রাতে ফাহিম পুরান ঢাকায় সাহ্রি খাওয়ার উদ্দেশ্যে তিন বন্ধুকে নিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় আসেন। পল্লবীতে তাঁর এক ভাই থাকেন। তাঁকেও সঙ্গে নেওয়ার জন্য সবাই পল্লবীতে যান। সেই ভাই বাসার বাইরে এসে ফাহিমকে বলেন, এখানে গাড়ি রেখেছ কেন? এখানে তো একটা খুন হয়েছে। এ কথা শুনে ফাহিম বলেন, তাহলে পুলিশকে জানাওনি তোমরা? ফাহিম সবাইকে সেখানেই থাকতে বলে পল্লবী থানায় যান।
রাত পৌনে ২টার দিকে তিনি ওসির কক্ষে গিয়ে বলেন, আপনার এলাকায় খুন হয়েছে, আপনারা কী করছেন? আপনারা কিছুই করছেন না। ওসি বলেন, খুনের কোনো খবর আমরা পাইনি। এর পর তাঁকে নিয়ে ডিউটি অফিসারের কক্ষে যান ওসি। সেখানে সবাই বলেন, খুনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তখন থানায় সেবা নিতে আসা দু’জনকে দেখিয়ে যুবক বলেন, ওনারা হয়তো জানেন। তাদের একজন বলেন, এমন কিছু হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফাহিম তাঁকে মারধর করতে গেলে ওসি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে, ফাহিমের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে পল্লবী থানায় যান তাঁর বন্ধু-স্বজনরা। তখন ফাহিমকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ। পরে বন্ধুদেরও আটক করা হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের বহনকারী গাড়িতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টিকার সাঁটানো ছিল। তবে তারা কেউ সাংবাদিক নন।