রংপুরে বিএনপির অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইফতার মাহফিল করেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৫ মার্চ) ইফতার শুরুর আগে বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ী বাজারে আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিল ও ঈদ সামগ্রী দেয়ার সময় বিএনপির লোকজনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবের এমপি ডিউক চৌধুরী ও পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরীর ক্যাডার এবং ইউপি চেয়ারম্যান ডলু শাহ গ্রাম পুলিশ দফাদার জমসেদসহ আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির কার্যালয়ে থাকা দলীয় নেতা-নেত্রীদের ছবি, ব্যানার, চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং লুটপাট করে। তবে এর আগে তারা বিএনপিকে হটিয়ে বাজারের পাশে কাচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াদুদ আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে ইফতার মাহফিল করেন বলে বাজারের লোকজন জানান। এ ঘটনা এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এলাকার লোকজন ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় দফাদার জমসেদ আলীকে আটক করে পুলিশকে সোপর্দ করেছেন।
এ বিষয়ে লোহানীপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক নিপুল জানান, লোহানীপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে কাঁচাবাড়ি বাজারে একটি দলীয় কার্যালয় করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কার্যালয়টি ভেঙে দিয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে পৌর বিএনপি সদস্য সচিব কমল লোহানী জানান, আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো সক্রিয় রয়েছে। সবাইকে একত্রিত হয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। বিশেষ করে বদরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ তিনি ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার কারণে বিএনপি’র প্রতি সুনজর দিতে পারছেন না। আমরা জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে লোহানী পাড়ার ঘটনাটির ব্যবস্থা নিবো।
বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায় সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিশেষ চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিন লোহানীপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় কোনো কার্যালয় ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কাঁচাবাড়ি হাটে একটি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে সুন্দরভাবে বিএনপির কার্যক্রম চলছিল।
তিনি আরও জানান, কার্যালয়টিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি টাঙানো হয়। এছাড়াও নেতাকর্মীদের বসার জন্য চেয়ার, টেবিল, বৈদ্যুতিক পাখা সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী কার্যালয়ের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দলীয় ছবি, ব্যানারসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে লুটপাট করে নিয়ে যায়। এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না আমরা হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একে এম আতিকুর রহমান আমার দেশকে জানান, খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে তদন্ত কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনায় দফাদার জমশেদ আলীকে আটক করে চিকিৎসার জন্য বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম আমার দেশকে জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি পুলিশকে বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থার নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যারা দোষী তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।