শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন

প্রমত্তা তিস্তা এখন যেন ধু-ধু মরুভূমি

ডেস্ক নিউজ / ২৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫

বর্ষা মৌসুমে যে তিস্তা নদী প্রতিবছর প্রমত্তারূপে আবির্ভূত হয়, তারই বুকে এখন শুধু ধু-ধু বালুচর। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও তাও নেই। যার করালগ্রাসে মানুষ ভিটেমাটি হারায়, সেই নদী এখন শুকিয়ে যেন মৃতপ্রায়।

নৌকা চলাচল বন্ধ, মানুষজন হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন এই বিশাল নদী। তিস্তার এই শুষ্ক রূপ দেখে মনে হবে, এটি যেন এক মরুভূমি।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে তিস্তার এই করুণ চিত্র দেখা গেছে।

এসময় গাবুড়ার চরের কৃষক কাইয়ুম আলী বলেন, যখন হামার পানির দরকার নাই, তখন ভারত পানি ছাড়ি হামার সর্বনাশ করে। আর এখন হামার পানি দরকার, এখন পানি নাই। পানির অভাবে ঠিকমতো চাষ করবার পারছি না। এর একটা সমাধান দরকার।

সত্তরোর্ধ্ব হামিদা বেগম বলেন, মোর স্বামী মরি গেইচে, ছাওয়া-পোওয়া নাই। এযাবত ১৫-১৬ বার তিস্তা হামার বাড়ি ভাঙিছে। এখন মানষের জমিত থাকি। হামার দুঃখ দেখার কেউ নাই।

নদীপাড়ের জেলে আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, এক সময় নদীতে প্রায় সারা বছর পানি থাকতো, মাছ ধরে সংসার চালাতাম। এখন বছরের বেশিরভাগ সময় পানি থাকে না। এখন রিকশা চালাই, দিনমজুরি করি। অনেকে পেশা বদলেছে।

তিস্তা পাড়ের শিক্ষিত যুবক ফুয়াদ শাহরিয়ার কালবেলাকে বলেন, বর্ষায় যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নেই তখন ভারত পানি ছেড়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি করে। মানুষের জমিজমা, বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়। আর যখন পানি দরকার তখন দেয় না। যার ফলে আজ নদীর এই দুর্দশা। পানি না থাকায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, নদীকেন্দ্রিক পেশাজীবীরা বেকার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত নদীটি খনন করা দরকার। সেই সঙ্গে ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করাও জরুরি।

নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার উৎসস্থল থেকে বিভিন্ন বাঁধ ও সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক হারে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে ন্যূনতম প্রবাহও থাকছে না। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের হিমবাহ গলনের ধরন বদলে গেছে, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে নদীকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 

 

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও কোনো কার্যকর সমাধান আসেনি। বিগত সরকারের সময়ে বহুবার তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। তবে জুলাই’২৪ পরবর্তীতে তিস্তা নদী রক্ষার আন্দোলন বেশ জোরদার হয়েছে। গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদীর ১১টি পয়েন্টে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারাও আসছেন তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ-দূর্দশার কথা শুনতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তার এই করুণ অবস্থা উত্তরবঙ্গের কৃষি, মৎস্যসম্পদ ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ সংকেত। দ্রুত সমাধান না বের করতে পারলে এই সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তাই দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে শুষ্ক মৌসুমেও তিস্তার পানিপ্রবাহ বজায় থাকে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিকল্প জলাধার তৈরি ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের উপায় বের করতে হবে। তিস্তা নদী খনন ও পুনরুজ্জীবিত করারও উদ্যোগ নিতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ