কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উপজেলা হেড কোয়ার্টার হতে পাঁচপীর জিসি সড়ক পর্যন্ত ৫.২৩০কি.মি.এলাকায় সড়ক উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ শুরুর বছর পেরিয়ে গেলেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে মাত্র ২কি.মি.রাস্তায় সামান্য কাজ করে ৩৬-৩৮শতাংশ কাজ দৃশ্যমান হয়েছে।
উপজেলার মাটিকাটামোড় থেকে কলেজমোড় পর্যন্ত এলাকায় ডব্লিউএমএম করে তার উপরে বালু দেয়ায় রাস্তাটি ধুলার রাস্তায় পরিনত হয়েছে। ধুলায় অতিষ্ঠ জনজীবন। বর্তমানে রাস্তাটি মানুষের ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
জানা গেছে,গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাধীন পাঁচপীর বাজার থেকে চিলমারী উপজেলা হেড কোয়ার্টার সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১হাজার ৪৯০মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প(৩য় সংশোধিত) এর আওতায় সড়ক উন্নয়নকরণ কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়।এ লক্ষে চিলমারী উপজেলা হেড কোয়ার্টার মাটিকাটারমোড় হতে পাঁচপীর জিসি সড়ক(চেইঃ ১২২০মি.-৫২৩০ মি.৪০১০মি.) উন্নয়নকরণ এবং চিলমারী উপজেলা হেড কোয়ার্টার হতে পাঁচপীর জিসি সড়ক(চেইঃ ০০মি.-১২২০মি. ১২২০মি.) মিলে মোট ৫.২৩০কি.মি.এলাকা উন্নয়নের ঠিকাচুক্তি সম্পাদিত হয় ২০২৪সালের ১১ফেব্রুয়ারী তারিখে।যার চুক্তি মূল্য ছিল ১০কোটি ৩৩লক্ষ ২হাজার ৮৩২টাকা।অতিমাত্রায় নিম্নদর দাখিল করে নাটোর এলাকার মীর হাবিবুল আলম এর নামে কাজটি বাগিয়ে নেন সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রি জাকির হোসেনের এপিএস রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।যেটি ১৮ফেব্রুয়ারী ২০২৪তারিখে শুরু হয়ে ১৭ফেব্রুয়ারী ২০২৫তারিখে শেষ হওয়ার কথা। রাস্তাটি নতুন মাটির হওয়ায় মাটির রাস্তার প্রায় ২কি.মি.এলাকায় রাস্তার দুই ধারে প্যালাসাইটিং ও প্রায় ৭০০ মিটার এলাকায় সিসি ব্লক দেয়াসহ মাটির অংশে রাস্তার উপরে বক্স কাটিং,স্যান্ড ফিলিং,সাববেজ, ডব্লিউএমএম এবং কার্পেটিং ও পাকা অংশের ২পাশ্বে ৩ফুট করে বাড়িয়ে তাতে মাটির রাস্তার ন্যায় সকল কার্যাদীসহ ডব্লিউএমএম ও কার্পেটিং করার কথা থাকলেও কাজের মেয়াদ শেষে মাটির রাস্তার অংশের মাত্র ২কি.মি.এলাকায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সামান্য কাজ করায় সবমিলে প্রায় ৩৬-৩৮শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে।
সেখানে প্যালাসাইটিং ও সিসি ব্লকের কাজ সম্পুর্ন বাদ রাখা হয়েছিল। বাকি ৩কি.মি.এলাকার কিছু অংশে ডব্লিউবিএম এর কাজ করে উপরে বালু দেয়ায় তা জনগনের ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ওই এলাকায় শুধু বালু আর বালু। কাজের মেয়াদ প্রায় শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওই ৫.২৩০কি.মি.এলাকায় রাস্তা উন্নয়ন কাজে অনিয়ম ও কাল ক্ষেপনের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে রাস্তাটি ঘুরে দেখা গেছে,পাকা অংশের রাস্তা বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দে নষ্ট হয়ে গেছে,কাঁচা অংশের কোথাও এখনও সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।মাটির রাস্তার অংশে দায়সাড়াভাবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে মাত্র ২কি.মি.এলাকার কিছু কাজ করা হলেও সেখানে প্যালাসেটিং কিংবা সিসি ব্লকের কোন কাজ বাদ রাখা হয়েছিল। সোমবার দুপুরে প্যালসেটিংয়ের জন্য(গাইড ওয়াল) রাস্তার নিচে একটি ভেকু মেশিনকে মাটি কাটতে দেখা গেছে।দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়াসহ সম্পুর্ণ রাস্তাটি ধূলার রাস্তায় পরিনত হয়েছে।
এসময় সাববাধ দুই থানারমোড় এলাকার আব্দুল হামিদ,তাজুল ইসলাম,রুস্তম আলীসহ অনেকে বলেন,নতুন মাটির রাস্তাটি প্যালাসাইটিং এবং সিসি ব্লক না দিলে টেকসই হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার বিভিন্ন জায়গা ধসে যেতে দেখা দিয়েছে।
তেলিপাড়া এলাকার মমিনুল ইসলাম,চার রাস্তার মোড় এলাকার মঞ্জু মিয়া,সালু মিয়া,ফরজ উদ্দিন,এন্তাজ আলীসহ অনেকে জানান,দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির কাজ চললেও রাস্তার দুই পাশ্বে গাইডওয়াল ও সিসিব্লক না দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে উপরের কাজ করা হচ্ছিল,সেটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দুদিন ধরে রাস্তার নিচে ধীর গতিতে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে দেখা যাচ্ছে। রাস্তাটির কাজ চুক্তিকৃত সিডিউল মোতাবেক এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোড় সুপারিশ করেন তারা।
কাজটির ঠিকাদার রাশেদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী(চঃদাঃ)মো.জুলফিকার আলী জানান,আমি নতুন এসেছি। ওই রাস্তার কাজ নেয়া ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকায় অনেক কষ্টে তাকে ধরে গত শুক্রবার চায়না ক্যাম্পে মিটিং করে সময় দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদার সেখানে আন্ডারটেকেন দিয়ে দুদিন ধরে চিলমারী অংশে ব্লোক ফেলে মাটি কাটা শুরু করেছে। ধুলা বন্ধ করতে তাদের প্রতিদিন রাস্তায় পানি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।