আওয়ামী লীগ দেশ বেচেও তিস্তার এক ফোঁটা পানি আনতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার লালমনিরহাটে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ শীর্ষক তিস্তা পাড়ে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বক্তাদের কথার সূত্র ধরে ফখরুল বলেন, ‘আজকে একদিকে যখন তারা (ভারত) সব বাঁধ ছেড়ে দেয়, গেট খুলে দেয়, তখন সেই পানির তোড়ে আমাদের ঘর-বাড়ি, গ্রাম, ধানের খেত সব ভেসে যায়। আবার যখন বন্ধ করে দেয়, তখন আমার সমস্ত এলাকা খরায় শুকিয়ে খটখট হয়ে যায়। তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ আর যায় না।’
তিনি বলেন, ‘বহু আগে থেকে আমরা এই তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলছি। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানিরা বলেছে, বাংলাদেশ হওয়ার পরে আমরা বলেছি। আওয়ামী লীগের সরকার এলো, প্রথম দিকে সবাই ভাবলো যে, ভারতের বন্ধু আওয়ামী লীগ, সুতরাং তিস্তার পানি বোধ হয় এবার পাই (পেয়ে) যাবে—লবডঙ্কা! ১৫ বছরে বাংলাদেশটাকে বেচে দিছে, তিস্তার এক ফোঁটা পানি আনতে পারে নাই।’
‘শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি নদী আছে যেগুলো ভারত থেকে আমাদের দেশে এসেছে। সবগুলো নদীর উজানে তারা বাঁধ দিয়ে দিয়েছে। পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ধান ফলাতে পারে না, ফসল ফলাতে পারে না। তারা তাদের জীবন-জীবিকা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়। আমাদের জেলেরা মাছ ধরতে পারেন না। প্রত্যেকটা মানুষকে আজকে এই কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে ৩৬ দিনে, সবার লড়াইয়ের মাধ্যমে সে পালিয়েছে। কোথায়? ওই ভারতে। একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আবার আমাদের যে শত্রু, তাকে দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে। ওইখান থেকে আবার সে বিভিন্ন রকম হুকুম জারি করে আওয়ামী লীগারদের।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কথায় তো বলেন যে আপনারা নিরপেক্ষ। এই জায়গায় কিন্তু নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে যে, আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই।’
খুব তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
ভারতের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো যে আচরণ, সেটা বন্ধ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে একটা বন্ধুভাবে দেখতে চাই কিন্তু সেই বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে। আমার যে পাওনা, সেই পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার সঙ্গে।’
এই আন্দোলন বিএনপি শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। ফখরুল বলেন, ‘লড়াই করেই আমরা তিস্তার পানি আনবো। আমাদের অধিকারগুলো আদায় করে নেব।’